অযোধ্যা পাহাড় :
পুরুলিয়া জেলার ঝাড়খণ্ড সীমান্তে দলমা পাহাড়ের একটি অংশ ও পূর্বঘাট পর্বতমালার একটি সম্প্রসারিত অংশ অযোধ্যা পাহাড়। উচ্চতা প্রায় ২০০০ফুট। অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গটি হল গোরগাবুরু। এই অঞ্চলটি ছোটো নাগপুর মালভূমির সবচেয়ে নিচু ধাপ। বাঘমুন্ডি বা অযোধ্যা পাহাড়ের আশেপাশের অঞ্চলটি হল একটি সম্প্রসারিত মালভূমি।
অযোধ্যার অতীত ঐতিহ্য :
হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে, রাম ও সীতা বনবাসের সময় অযোধ্যা পাহাড়ে এসেছিলেন। এখানে এসে সীতা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লে রাম নিজের তীরের সাহায্যে মাটি খুঁড়ে জল বের করে আনেন। সেই জায়গাটি সীতাকুণ্ড নামে পরিচিত। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্থানীয় আদিবাসীরা এখানে বন্য পশু শিকার উৎসবে যোগ দেয়।
কিভাবে যাবেন ?
ট্রেনে – কলকাতা (হাওড়া বা সাঁতরাগাছি স্টেশন) থেকে আসতে হবে পুরুলিয়া জাংশন। ট্রেনে হাওড়া থেকে পুরুলিয়া যাওয়ার দুটি পৃথক রুট আছে, ভায়া খড়্গপুর-আদ্রা বা ভায়া খড়্গপুর-টাটানগর। অনেক ট্রেন আছে, সময় লাগে ৭-৮ ঘন্টা। সেকেন্ড সিটিং বা স্লিপার হলে ভাড়া ১৫০/- মতন আর এসি চেয়ার কার থ্রি এসি স্লিপার হলে খুব বেশি ৫৫০/-। এখানে বলে রাখি, অযোধ্যা পাহাড়ের সবচেয়ে কাছের স্টেশন কিন্তু বরাভূম তবে সুবিধা বেশি পুরুলিয়া জাংশনে নামলে। পুরুলিয়া স্টেশন থেকে বাসে বা গাড়িতে আসতে হবে অযোধ্যা পাহাড়। হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র বাস আছে (সরকারি ও বেসরকারি বাস মিলিয়ে দিনে চার বার আসা-যাওয়া করে) আর সেসব ছাড়ে পুরুলিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে; টোটো করে জনপ্রতি ২০/- দিয়ে আসতে হবে বাস স্ট্যান্ড। তাই বাস ধরার প্ল্যান থাকলে সেই মতন ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে, বাসের ভাড়া ৫০/- মতন। তাছাড়া বাস অযোধ্যা হিল টপে ওঠে না কাজেই আপনাকে অযোধ্যা পাহাড়ের নীচেই ডেরা বাঁধতে হবে।
ট্রেন টাইম টেবিল :
https://indiarailinfo.com/search/hwh-howrah-junction-to-prr-purulia-junction/1/0/1468
বাসে – কলকাতার ধর্মতলা থেকে দিন/রাতের, সাধারণ/বাতানুকূল বাসে পুরুলিয়া চলে আসা যায় ৮-১০ ঘন্টায়। সাধারণ বাসের ভাড়া ১৫০/- আর বাতানুকূল বাসের ৬০০/- মতন। পুরুলিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে অযোধ্যা পাহাড় যেতে ধরতে হবে বাস, সময় নেবে প্রায় দু ঘন্টা অথবা ভাড়া করতে হবে গাড়ি। বাসের ভাড়া আগেই বলেছি, পুরুলিয়া থেকে অযোধ্যা পাহাড় হিল টপ পর্যন্ত গাড়িতে আসলে বোলেরোর ভাড়া ১২০০/- মতন পড়বে তবে দরদাম করে নেবেন। মারুতি ওমনি বা অন্য ছোট গাড়ি নিলে ভাড়াটা একটু কম পড়বে কিন্তু আমার মতে অযোধ্যা সার্কিটে বড় গাড়ি নিয়ে ঘুরলেই একমাত্র সব স্পটে যাওয়া সম্ভব।
থাকার জায়গা :
পুরুলিয়া থেকে খুব সহজেই বাস অথবা প্রাইভেট গাড়িতে করে অযোধ্যা পাহাড় যায়। পাহাড়ের উপরে থাকার বন্দোবস্ত আছে। ইচ্ছে হলে পাহাড়ের নিচে বাঘমুন্ডি গ্রামেও থাকতে পারেন। তবে পাহাড়ের উপরেই থাকার অভিজ্ঞতা হাতছাড়া করা উচিত নয়। পাহাড়ের উপরে বেশ কিছু হোটেল - সেবাশ্রম ইত্যাদি রয়েছে।
দর্শনীয় স্থান :
১) ময়ূর পাহাড় :
হিলটপ থেকে এক কিলোমিটার গেলে দেখতে পাবেন ময়ূর পাহাড়। অল্প একটু চড়াই ভেঙে উঠলে দেখা যাবে ময়ূর পাহাড় এর ওপর ভগবান হনুমান দেবের একটা মন্দির। পাহাড়ের একদম উপরে উঠলে পুরো অযোধ্যা কেই চোখের সামনে পাওয়া যায়। অনেক বছর আগে এখানে ময়ূরের দেখা মিলত। পাহাড় থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য টা অসাধারন ।
২) আপার ড্যাম এবং লোয়ার ড্যাম :
অযোধ্যা পাহাড়ের উপর কংসবতী নদীতে দুটি ড্যাম রয়েছে। এদের একটি হল লোয়ার ড্যাম। সানসেট এর জন্যে এই জায়গা খুবই মনোরম। পিছনের পাহাড় উঠে গেছে আপার ড্যাম পর্যন্ত অনেক উঁচুতে, এবং সামনে ড্যামের জল ঝিলের মধ্যে সূর্যের আলোর সাথে খেলা করে ।
লোয়ার ড্যাম থেকে পাহাড় ধরে উপরে উঠলেই পাওয়া যাবে আপার ড্যাম । পিকনিক করার জন্য দারুণ জায়গা!! যদিও আপার ড্যাম এ বেশ কিছু পুলিশি সতর্কতা রয়েছে।
আপার ড্যামের বিশেষত্ব হল, এখানে জল সঞ্চয় করে রাখা হয়। পরে সেই জল থেকে টারবাইন এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরী হয়, আর জল পৌঁছায় লোয়ার ড্যামে। আপার ড্যাম থেকে পুরো অযোধ্যা পাহাড় মন্ডলকে দেখা যায়।
৩)মার্বেল লেক :
ময়ূর পাহাড় থেকে বাঘমুন্ডির রাস্তায় আপার ড্যাম যাওয়ার রাস্তা কে বামপাশে রেখে শাল বনের পথ ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় একটি পাথরের লেক এ । চারপাশে ঘিরে থাকা উচু পাথুরে টিলার দৃশ্য বেশ সুন্দর। এর পর আর একটু এগিয়েই পৌঁছে যাওয়া যায় বামনি ফলস ।
৪) বামনী ফলস :
অযোধ্যা পাহাড়ের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ঝর্ণা হল বামনী ফলস। এই ঝর্নার পাশ থেকে পাথরের সিঁড়ির একটি রাস্তা প্রায় ২৫০ ফুট নিচে পাহাড়ের পাদদেশে একটি লেকে গিয়ে মিশেছে। বিকেল পার করে সন্ধ্যে বেলায় যখন সূর্য পাহাড়ের পিছনে ডুবতে ব্যস্ত, সেই দৃশ্য আপনাকেও ভাবুক করে তুলবে। রঙ্গিন আলো আঁধারির খেলায় ঝর্নার তখন এক অন্যরকম রূপ। অক্টোবর নভেম্বর মাস এ এই falls এর অসাধারন রূপ আছে।
৫) তুরগা ফলস :
বামনী ফলসের বেশ কিছু দূরেই রয়েছে ঠুরগা ফলস। দুটি পাহাড়ের মাঝখানে এক চিলতে সরু ফিতের মতো জলের ধারা । পাহাড় বেয়ে একেবারে ঝর্ণার নীচে নেমে যাওয়া যায় খুব সহজেই।
0 Comments
Have any doubts please contact with me